সবজির দামে সন্তুষ্ট ক্রেতারা

নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজধানীর বাজারগুলোতে সারাবছরই সবজির দাম কমবেশি একটু চড়াই থাকে। সেই চিত্রটি কিছুটা বদলে যায় শীতের আগমনে। এ বছরে অবশ্য শীত মৌসুমের শুরুটা খুব একটা সুখকর ছিল না। শীত মৌসুমের দেখা মিললেও কমছিল না সবজির দাম। শেষ পর্যন্ত সারাদেশ থেকে বাহারি সবজির পর্যাপ্ত সরবরাহ শুরু হলে ক্রেতাদের সেই ‘কাঙ্ক্ষিত’ কম দামের সবজিতে ভরপুর হয়েছে বাজার। শুধু তাই নয় বিক্রেতারা জানালেন, অন্য বছরগুলোর তুলনাতেও শীতের সবজির দাম একটু কমই যাচ্ছে। ক্রেতারাও বলছেন, একশ টাকার সবজি কিনলেই ব্যাগ ভরে যাচ্ছে। খুশি মনে সেই সবজি নিয়ে বাড়ি যাচ্ছেন তারা।
শনিবার (১৬ জানুয়ারি) রাজধানীর কল্যাণপুর, শ্যামবাজার, রাজাবাজার, কারওয়ান বাজার ও মোহাম্মদপুর কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেল এমন চিত্রই। এ অবস্থায় ক্রেতারা তো বেজায় খুশি। সবজির দাম কম হলেও বিক্রির পরিমাণ বেশি হওয়ায় বিক্রেতারাও অখুশি নয়।
শনিবার (১৬ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় রাজাবাজারে গিয়ে দেখা যায়, বিপুল পরিমাণ সবজিতে গোটা বাজার যেন রঙিন হয়ে উঠেছে। ভোর থেকে শুরু হয়ে রাত ৯টা পর্যন্ত এখানে চলে বেচাবিক্রি। এই বাজারের বেশিরভাগ বিক্রেতাই অবশ্য পাইকারি বিক্রেতা। পাশে খুচরা বিক্রেতারা থাকলেও তাদের কাছেও সবজির দাম বেশ কম।
রাজাবাজারে খুচরা দোকানগুলোতে মাঝারি আকারের ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে প্রতি জোড়া ১০ টাকা থেকে ১৫ টাকা দরে। বড় আকারেরগুলোর দাম প্রতি জোড়া ২০ থেকে ৩০ টাকা। এই বাজারে পাতা কপি প্রতি পিস ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি কেজি শিম ১৫ থেকে ২০ টাকা, শসা ৩০ টাকা, খিরা ২০ থেকে ৩০ টাকা, টমেটো ৩০ টাকা, বেগুন মানভেদে ১০ টাকা থেকে ২৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আকারভেদে লাউয়ের দাম ২০ থেকে ৩০ টাকা। এই বাজারে আলুর দামও কম— সাদা আলু ২০ টাকা ও লাল আলু ২৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে। বথুয়া শাক, মেথি শাক, লাল শাক ও পালং শাক বিক্রি হচ্ছে ৫ টাকা আঁটি দরে। লাউ শাকের দাম একটু বেশি— ১৫ থেকে ২০ টাকা। এছাড়া গাজর ২০ টাকা কেজি, মূলা ৫ থেকে ১০ টাকা কেজি ও মটরশুঁটি ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
‘দাম কম তাই বেশি করে সবজি খান’— এভাবেই খুচরা দোকানদারা ডাক দিচ্ছেন আর ক্রেতাদের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করছেন।
প্রায় একই চিত্র দেখা গেছে মোহাম্মদপুর কাঁচাবাজারে, ক্রেতারা জানালেন, এই বাজারে গত কয়েকদিনের তুলনায় আজ টাকি মাছের দাম ছিল বেশি। আগের সপ্তাহের তুলনায় দাম বেড়ে ৩০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে টাকি মাছ। অন্যান্য মাছ ও মাংসের দাম আগের মতোই বিক্রি হতে দেখা গেছে। ব্রয়লার মুরগি ১২০ টাকা কেজি ও কর্ক ১৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
রাজা বাজারে সবজির দাম প্রায় একই রকম থাকলেও কিছু জিনিসপত্রে দাম বেশি দেখা গেছে। এই বাজারে পেঁয়াজের কেজি ৪০ টাকা, মটরশুঁটি ৮০ টাকা, টমেটো ৫০ টাকা। আর কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা কেজি দরে। দাম বেশি হওয়ার কারণ জানতে চাইলেএক বিক্রেতা বলেন, ‘দাম আরও বেশি ছিল। আজই বরং কিছুটা কম।’ এই বাজারে ফুলকপি ৩০ থেকে ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
সকাল ১১টার দিকে যাত্রাবাড়ী বাজারে গিয়ে দেখা যায়, সবজির দাম অনেকটাই কম— অনেকটা শ্যামবাজারের মতোই। মাছের দামও এই বাজারে কম। কেবল মটরশুঁটির দাম একটু বেশি— প্রতি কেজি ৮০ টাকা। এছাড়া পেঁয়াজ ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজি ও আলু ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে এই বাজারে।
যাত্রাবাড়ী কাঁচাবাজার সমিতির সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান মুন্সি সারাবাংলাকে বলেন, এখন সবজির সরবরাহ অনেক। তাই দামও অনেক কম। অনেক পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা সবজি বিক্রি করতে না পেরে ফেল দেন। দাম কম থাকলে ব্যবসায়ীরা লাভ করতে পারেন না। অন্যদিকে ক্রেতারাও সবজি কম খান। অথচ দাম কম থাকলে সবজি বেশি খাওয়া উচিত আমাদের। সবজি বেশি করে খেলে সবার লাভ।
তিনি আরও বলেন, এখন ১০০ টাকা হলে প্রায় দুই ব্যাগ ভরে সবজি কেনা যায়। আর আগে এই পরিমাণ সবজি কিনতে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা লাগত। তাই বেশি করে সবজি কিনতে ক্রেতাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।